
প্রকাশিত: Sun, Jan 15, 2023 2:40 PM আপডেট: Sat, May 10, 2025 6:57 PM
মুসলমানেরা বর্তমান সভ্যতার বিকাশে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে একাধিকবার বিজয়ী হয়ে এবং অন্তত একবার পরাজিত হয়ে
শিশির ভট্টাচার্য্য
মুসলমানেরা বর্তমান সভ্যতার বিকাশে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে একাধিকবার বিজয়ী হয়ে এবং অন্তত একবার পরাজিত হয়ে। সমগ্র আরব, পারস্য এবং ইওরোপ ও আফ্রিকার কিয়দংশ জয় করে উমাইয়া ও আব্বাসীয় বংশের আরবেরা কয়েকশ বছরের জন্য জ্ঞানচর্চায় মন দিয়েছিল। আরবদেশে উমাইয়াদের পতন হলেও ৭১১ থেকে ১৪৯২ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বছর উমাইয়া বংশ স্পেনের বড় একটি অংশ দখলে রেখে সেখানেও জ্ঞানচর্চায় রত হয়েছিল। এই জ্ঞানচর্চার প্রাথমিক ভিত্তি ছিল গ্রীক ও রোমান জ্ঞান। মধ্যযুগের প্রথম পর্বে (৫০০-১০০০) ইওরোপ নিজেদের এই জ্ঞান অনেকটাই বিস্মৃত হয়েছিল। পথচারী থেকে রাজা বা সম্রাট পশ্চিম ইওরোপের প্রায় সবাই ছিল নিরক্ষর। ত্যুর যুদ্ধে আরবদের পরাজিত করে (এককালে জার্মানি থেকে আগত) ফ্রাঙ্ক জাতি শক্তিশালী ফরাসি রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তী ৩০০ বছরে এই জাতি আরও শক্তিশালী হয়ে ১০০০ সালের দিকে ক্রুসেড যুদ্ধ করতে গিয়েছিল সুদূর আরব দেশে। ক্রুসেডের উদ্দেশ্য ‘পবিত্র ভূমি জেরুজালেম উদ্ধার’ বলা হলেও এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল লুটপাট।
ক্রুসেড যুদ্ধে আরবেরা প্রথমে পরাজিত হলেও, পরে ইওরোপেীয়রাই ক্রমাগত হারছিল এবং অবশেষে কুর্দি সালাউদ্দীনের সঙ্গে যুদ্ধে গরুহারা হেরে জেরুজালেম ইওরোপীয়দের হাতছাড়া হয়েছিল। ক্রুসেডারদের মধ্যে ফরাসিরাই ছিল সংখ্যায় বেশি। এ কারণে ইওরোপীয় মাত্রকেই আরবিতে ‘ফারাঙ্গ’ এবং সেখান থেকে ভারতীয় ভাষাগুলোতে ‘ফারাঙ্গি’ বা ‘ফিরিঙ্গি’ শব্দের উদ্ভব। চট্টগ্রামে এখনও একটি ‘ফিরিঙ্গিবাজার’ আছে।
ইওরোপীয়রা ক্রুসেডে হেরেছিল বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জিতে গিয়েছিল আরও অন্তত হাজার বছরের জন্য। আরবদেশে গিয়ে ইওরোপীয়রা দেখলো, আরবেরা তাদের চেয়ে অনেক বেশি ভদ্র ও উদার এবং জ্ঞানী। আরবদের জ্ঞানের উৎসের খবর নিতে গিয়ে ইওরোপীয়রা জানলো, আরবেরা লেখাপড়া করে। তারা কী পড়ে জানতে গিয়ে ইওরোপীয়রা পুনরায় আবিষ্কার করলো বিস্মৃত গ্রীক রোমান জ্ঞান। অবশ্য আরব-অধিকৃত স্পেনে গিয়েও অনেক শিক্ষার্থী তৎকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতো। এই জ্ঞানর্চচার প্রয়োজনে ইওরোপে, হ্যাঁ, শুধু ইওরোপে সৃষ্টি হয়েছিল বিশেষ একটি ছাত্র বা শিক্ষক সমিতি, যার নাম ‘ইউনিভার্সিটি’। শব্দটির অর্থ ‘সঙ্ঘ’ বা ‘সমিতি’। শব্দটির সংস্কৃত অনুবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। ইওরোপের/পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১০০-১৯০০, এই ৮০০ বছর নৈব্যক্তিক জ্ঞানচর্চা হয়েছে, যা পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি, হয়তো এখনও খুব একটা হয় না।
পঞ্চম শতকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন হলেও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য টিকে ছিল আরও হাজার বছর। সেখানে গ্রীক-রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বহাল ছিল। পঞ্চদশ শতকে তুর্কিরা রোমানদের পরাজিত করে কনস্ট্যান্টিনোপল বা ইস্তাম্বুল দখল করে নিলে সেখানকার বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-বিজ্ঞানীরা নিজেদের পুঁথিপত্র নিয়ে পালিয়ে গেলেন ইওরোপে, বিশেষ করে ইতালিতে। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে প্রথমে ইতালি এবং তারপর ফ্রান্সসহ সারা ইওরোপে রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণ শুরু হবার পিছনে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য থেকে আসা এই অভিবাসী পণ্ডিত-শিল্পীদের ভূমিকা ছিল। তুর্কিরা কনস্ট্যান্টিনোপলের যুদ্ধে বিজয়ী না হলে রেনেসাঁ হতো না, কিংবা হয়তো বিলম্বিত হতো।
৭৩২ সালে আরবেরা যদি শার্ল মার্তেলের (৬৯০-৭৪১) সঙ্গে ত্যুর বা পোয়াতিয়ের যুদ্ধে পরাজিত না হতো, তবে পুরো ইওরোপ আরবদের দখলে চলে যেতো। সে ক্ষেত্রে কী হতে পারতো, আমরা তা কল্পনা করতে পারি। এই সাম্রাজ্য হয়তো টিকতো না, আরব দেশে আব্বাসীয় বা উমাইয়া সাম্রাজ্যের মতো। যদি টিকতো, তবে এই সাম্রাজ্য খুব বেশি হলে তুর্কিদের ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের মতো হতো। ওসমানিয়া সাম্রাজ্যে লেখাপড়া অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু সেখানে ইওরোপের মতো বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়নি, ইওরোপের মতো জ্ঞানচর্চাও হয়নি। পুনর্জাগরণের ফলশ্রুতিতে ইওরোপে শিল্পবিপ্লব হয়েছিল। ওসমানিয়া সাম্রাজ্য বহাল ছিল বিংশ শতকের প্রথমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত, কিন্তু সেখানে শিল্পবিপ্লব হয়নি। অবশেষে ইওরোপীয়রা ওসমানিয়া খেলাফত ভেঙে চুরমার করে দেয় এবং এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ পাশ্চাত্যের হাতেই রয়েছে। এভাবেই (আরব এবং তুর্কি) মুসলমানদের একাধিক বিজয় এবং একটি মাত্র পরাজয় পাশ্চাত্য সভ্যতার বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
